বাংলাদেশে আমদানিকৃত চালানের ক্ষেত্রে শিপিং এজেন্ট জাহাজযোগে আমদানিকৃত পণ্যের বিবরণ সংবলিত ম্যানিফেষ্ট কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নিকট ইলেকট্রোনিক মাধ্যমে দাখিল করে। ট্রাকযোগে আমদানির ক্ষেত্রে পরিবহণ কোম্পানি/ট্রাক ড্রাইভার কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নিকট আই.জি.এম (IGM) দাখিল করে। আমদানি ম্যানিফেষ্ট দাখিলের পর আমদানিকারকের নিয়োজিত সিএন্ডএফ এজেন্ট (অথবা আমদানিকারক নিজেই) নিজস্ব অফিস/প্রাঙ্গনে পণ্য ঘোষণা (যা বিল-অব-এন্ট্রি নামে বহুল প্রচলিত) সম্পন্ন করে ASYCUDA World সফটওয়্যারের মাধ্যমে কাস্টমস সিস্টেমে দাখিল করে। সিঙ্গেল এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ডকুমেন্ট (Single Administrative Document - SAD) নামে পরিচিত ফরমেটে পণ্য ঘোষণা বা বিল-অব-এন্ট্রি দাখিল করতে হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড হতে জারিকৃত নির্দিষ্টকৃত বিল অব এন্ট্রি এবং বিল অব এক্সপোর্ট ফরম আদেশ, ২০০১ -তে আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে কি কি দলিলাদি দাখিল করতে হবে তার উল্লেখ রয়েছে। আমদানি পণ্য কাস্টমস হতে খালাসের ক্ষেত্রে বিল-অব-এন্ট্রির সঙ্গে (ব্যতিক্রম ব্যতীত) নিম্নলিখিত দলিলাদি দাখিল করতে হবে:
১. ঋণপত্র (Letter of credit);
২. ইনভয়েস; (Commercial Invoice & Proforma Invoice)
৩. বিল অব ল্যান্ডিং/এয়ারওয়ে বিল/ট্রাক রিসিট/রেলওয়ে রিসিট; (Bill of Loading/AWB/TR/RR)
৪. প্যাকিং লিস্ট; (Packing List)
৫. ’কান্ট্রি অব অরিজিন’ সনদ (কয়লা এবং রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্প ব্যতীত); (CO)
৬. বীমা পলিসি/ বীমা কাভার নোট; (Policy & Cover Note)
৭. মূল্য সংযোজন কর/ ব্যবসায় সনাক্তকরণ সনদ। (VAT Registration Certificate)
উপর্যুক্ত দলিলাদি ছাড়াও আমদানি পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে পণ্যভেদে নিম্নবর্ণিত অতিরিক্ত দলিলাদি দাখিল করতে হবে:
১. পঞ্চান্নটি (৫৫) পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বিডিএস (BDS) মান (ষ্ট্যান্ডার্ড) বাধ্যতামূলক। রপ্তানিকারক দেশের স্বীকৃত (accredited) ল্যাবরেটরী কর্তৃক ইস্যুকৃত মান বিষয়ক সনদ না থাকলে আমদানি নীতি আদেশ, ২০১৫-১৮ এর অনুচ্ছেদ ২৬(২৮) অনুযায়ী বিএসটিআই হতে ইস্যুকৃত সনদ।
২. খাদ্রদ্রব্যের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যুকৃত তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষার রিপোর্ট (আমদানি নীতি আদেশ, ২০১৫-১৮, অনুচ্ছেদ ১৬)।
৩. আমদানিকৃত খাদ্যসামগ্রী বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন কর্তৃক পরীক্ষার পর উহার তেজস্ক্রিয়তা গ্রহণযোগ্য সীমার মধ্যে রয়েছে মর্মে প্রত্যয়নপত্র (আমদানি নীতি আদেশ, ২০১৫-১৮, অনুচ্ছেদ ১৬(৯))।
৪. দুগ্ধজাতীয় খাবার এবং পাউডার দুধ, কয়লা এবং হার্ডকোক, ব্রেক এ্যাক্রেলিক (এইচ,এস,কোড ৩৯১৫.৯০), এম,এস, বিলেট (এইচ,এস, হেডিং ৭২.০৭) এবং পাবলিক সেক্টর এজেন্সী কর্তৃক আমদানির বেলায় অনুমোদিত আইটেমের ক্ষেত্রে একক আইটেমের আমদানি মূল্য পঞ্চাশ লক্ষ টাকা বা তার বেশী হলে খ্যাতিসম্পন্ন পিএসআই কোম্পানির নিকট হতে প্রাক-জাহাজীকরণ পরিদর্শন (পিএসআই) সনদ উপস্থাপন করতে হবে।
৫. বিস্ফোরক দ্রব্য আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ, জালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শকের পূর্বানুমতি (আমদানি নীতি আদেশ, ২০১৫-১৮, অনুচ্ছেদ ২৬(১))
৬. মেধাস্বত্ব সংক্রান্ত বাংলাদেশে প্রচলিত আইনে নিবন্ধিত ব্রান্ডের পণ্য সামগ্রী আমদানির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্রান্ডের পণ্যের মেধাস্বত্বাধিকারী কর্তৃক সত্যায়িত মেধাস্বত্ব সনদপত্র (আমদানি নীতি আদেশ, ২০১৫-১৮, অনুচ্ছেদ ৫(৬)(গ))
৭. টেলিকমিউনিকেশন যন্ত্রপাতির আমদানির ক্ষেত্রে বিটি আর সি এর পুর্বানুমতি (আমদানি নীতি আদেশ, ২০১৫-১৮, অনুচ্ছেদ ৬(৫১)
কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আমদানি পণ্য চালানের শুল্ক করাদি নিরুপণের জন্য আমদানিকারক বা তদীয় মনোনীত সিএন্ডএফ এজেন্ট সরকারী কোষাগারে শুল্ক করাদি জমা দেয়। শুল্ক করাদি জমা নিশ্চিত হওয়ার পর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পণ্য খালাসের নিমিত্তে রিলিজ অর্ডার ইস্যু করে। কাস্টমস কর্তৃক রিলিজ অর্ডার ইস্যুর পর বন্দর কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদন শেষে পণ্য খালাস দেয়া হয়।
একশত ডলার মূল্য সীমা পর্যন্ত এবং ৫ কেজি ওজন পর্যন্ত নমুনা (sample) ম্যানুয়াল সিস্টেমে দিনে দিনে ঢাকা কাস্টম হাউসের অধীন এয়ার ফ্রেইট ইউনিটের মাধ্যমে খালাস দেয়া হয়। তবে সেক্ষেত্রে প্রাপককে এয়ারওয়ে বিলের ওপর এই মর্মে প্রত্যয়ন করতে হবে যে, প্রযোজ্য শুল্ক করাদির জন্য ”shipper” (প্রেরক) কে বিল করা হবে। উপরি উল্লিখিত মুল্য সীমা বা ওজনের বেশী নমুনার ক্ষেত্রে ASYCUDA World ব্যবস্থার অধীনে কাস্টম্স ক্লিয়ারেন্স এর প্রয়োজন হবে।
উল্লেখ্য যে, আমদানিকৃত প্রাণি, গাছপালা (উদ্ভিজ্জ) এবং উদ্ভিদজাত দ্রব্যাদি খালাসের ক্ষেত্রে সংগনিরোধ শর্ত (quarantine condition) প্রতিপালন করতে হবে। অর্থাৎ উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং কর্তৃক ইস্যুকৃত সংগনিরোধ সনদ, ফিউমিগেশন সনদ দাখিল করতে হবে। আমদানি নীতি আদেশ, ২০১৫-১৮ এর অনুচ্ছেদ ২৬(৬০) অনুযায়ী আমেরিকান কটন অর্থাৎ American Hemisphere এলাকায় উৎপাদিত এবং প্যাকিংকৃত সকল কাঁচাতুলা আমদানির ক্ষেত্রে ফিউমিগেশন বাধ্যতামূলক।
কাস্টমস বিমান বন্দরে কোনো পণ্য চালান অবতরণ বা আনলোডিং এর ২১ দিনের মধ্যে অথবা কাস্টমস সমুদ্র বন্দর/স্থল শুল্ক স্টেশন বা কাস্টমস ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোতে অবতরণ বা আনলোডিং এর ৩০ দিনের মধ্যে, অথবা যথাযথ কর্মকর্তা কর্তৃক অনুমোদিত বর্ধিত সময়সীমার মধ্যে খালাস করা না হলে উক্ত পণ্য চালান নিলামের মাধ্যমে ব্যবস্থিত করা হবে। (দি কাস্টমস্ এ্যাক্ট, ১৯৬৯ এর ধারা ৮২)।
যে সকল ক্ষেত্রে পণ্য চালানের রাসায়নিক বা অন্য কোন পরীক্ষা বা অধিকন্তু অন্য কোনো অনুসন্ধান (enquiry) ব্যতীত পণ্যের সঠিক শুল্ক করাদি তাৎক্ষণিকভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব না হয়, বা আমদানি পণ্য চালান খালাসের জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় দলিলাদি দাখিল করা না হয়, সেই ক্ষেত্রে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পণ্য চালানটি সাময়িক শুল্কায়নের অনুমতি দিতে পারে। এই ক্ষেত্রে পণ্য চালানটি চূড়ান্ত শুল্কায়ন হলে যে পরিমাণ অতিরিক্ত শুল্ক করাদি পরিশোধযোগ্য হতে পারে, সেই অতিরিক্ত পরিমাণ শুল্ক করাদির বিপরীতে (যা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পর্যাপ্ত মর্মে গণ্য) উক্ত অংকের সমপরিমাণ নি:শর্ত ব্যাংক গ্যারান্টি/নিরাপত্তা জামানত (security deposit) আমদানিকারককে (ওয়্যারহাউসকৃত পণ্য ব্যতীত) কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বরাবর দাখিল করতে হবে। এই ক্ষেত্রে সাময়িক শুল্কায়নের তারিখ হতে ১২০ কার্যদিবসের মধ্যে চালানটির চূড়ান্ত শুল্কায়ন সম্পন্ন করতে হবে।
পাঠকদের বোঝার সুবিধার্থে কিছু সরকারি অনুমতিপত্রের কপি দেওয়া হলো, যা আমার কর্ম জীবনে যে সংস্থাগুলো থেকে 'অনাপত্তি পত্র' পেয়েছি সেগুলো যুক্ত করে দিলাম।
কৃতজ্ঞতাঃ লেখাটি লিখতে বাংলাদেশ কাস্টমস সাইটের সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে।
0 Comments